Krang Suri জলপ্রপাতের আশেপাশে নাক পাতলে নাকি বুনো এক গন্ধ ভেসে আসে ! অনেকটা নাকি নেকড়ে বাঘের গন্ধ। স্থানীয় ভাষায় Krang কথার অর্থ হল ‘ নেকড়ে ’। অনেকেই বলেন Krang Suri জলপ্রপাতের পিছনের গাঢ়ো অন্ধকার গুহায় একসময় ছিল দানবীয় নেকড়েদের রাজত্ব। তবে সত্যিই কি তাই ? নাকি এটা কোন ছেলে ভোলানো কাহিনী? ইতিহাস কি বলে ? দেখা যাক ।
বর্তমান বাংলাদেশের কিছু অংশ ও ভারতের উত্তর-পূর্ব পাহাড়ের কিছু এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জয়ন্তিয়া রাজ্য। সে সময় এই রাজতন্ত্রের রাজা ছিলেন প্রভাত রায় (1500- 1516 )। এ রাজ্যের সর্বশেষ রাজা ছিলেন রাজেন্দ্র সিংহ (1815 -1832) । 1826 খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গো-বার্মা যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়ন্তিয়ার রাজাকে করের বিনিময়ে সুরমা নদীর উত্তর অংশে রাজত্বের অনুমতি প্রদান করে । কিন্তু পরবর্তীতে রাজা কর প্রদানে অসন্তোষ প্রকাশ করলে 1835 খ্রিস্টাব্দের 15ই মার্চ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়ন্তিয়া রাজ্য হস্তগত করে। জয়ন্তিয়া রাজ্যের রাজা কে সিলেটের কিছু অংশ ও মাসিক 500 টাকা ভাতা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। ব্রিটিশরা শুধুমাত্র সমতল অংশটিকে সরাসরি শাসন করলেও পাহাড়ি অংশগুলির শাসন চালাত তাদের নিয়োজিত 15 জন দলুই ও 4 জন সর্দার । তবে ব্রিটিশদের আগমনের আগে জয়ন্তিয়া রাজাদের 335 বছরের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। জয়ন্তিয়া রাজ্য পূর্ব শিলং মালভূমি বর্তমানে সিলেট সমভূমির, উত্তরের বারাক নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাজ্যের রাজধানী ছিল জৈন্তিয়াপুর, যা বর্তমান সিলেট থেকে 35 কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল নর্টিয়াং, যা বর্তমানে পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলার অন্তর্গত। আজও নর্টিয়াং এর সপ্তদশ শতকের প্রাচীন দুর্গা মন্দির ও মনোলিথ রাজ্যের বীরত্বের ও গর্বের ইতিহাস বহন করে চলেছে। যদিও জয়ন্তিয়া রাজ্য সম্পর্কিত ঐতিহাসিক দলিল খুব কমই পাওয়া গেছে। তবুও মৌখিক ইতিহাস অনুসারে জানা যায় যে জয়ন্তিয়ার রাজ পরিবারের সাথে অহম ও কোচ রাজবংশের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল ।
সপ্তদশ শতকে শক্তিশালী কাচারি রাজা শত্রুদমনের আক্রমণের পর থেকে জয়ন্তী রাজ্যের উপর কোচ ও অহমের রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে।জয়ন্তিয়া রাজারা তাদের সীমানা ধরে রাখা ও সম্প্রসারণের জন্য প্রায় সমতল ময়দান ,পাহাড়ি উপত্যকায় গরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হতেন। জয়ন্তিয়ার রাজাদের 335 বছরের রাজত্বকালে Krang Suri ছিল পাহাড়ি সবুজে ঘেরা নির্জন প্রাকৃতিক অস্ত্রাগার । রাজারা তাদের প্রাণঘাতী বিশেষ বিশেষ অস্ত্র এই জলপ্রপাতের পিছনের গুহাতে লুকিয়ে রাখতেন। প্রতিবার যুদ্ধের পূর্বে অত্যন্ত অনুগত সেনাপ্রধানেরা Krang Suri তে যেতেন অস্ত্র সংগ্রহে। আজও খুব প্রাচীন কিছু জয়ন্তিয়া আদিবাসী ছাড়া এই রহস্য কারো জানা নেই ।জলপ্রপাতের পিছনে প্রাচীন গুহা অস্তিত্ব আজও রহস্যই থেকে গেছে।
ঐতিহাসিকদের একাংশের দাবি যে জয়ন্তিয়া রাজারা এই গুহাতে সাধারণত যে প্রাণঘাতী অস্ত্র রাখতেন তা ছিল কাস্তে আকৃতির। Pnar ভাষায় (dialect Spoken in Jaintia Hill) ‘Krang’ কথার অর্থ ‘গুহা’ এবং ‘Suri’ অর্থাৎ ‘কাস্তে আকৃতির অস্ত্র’। আবার সাধারণ অর্থে ‘Suri' বলতে বোঝায় নেকড়ে। তাই অনেকেই মনে করেন Krang Suri নামটা এসেছে ‘নেকড়ের গুহা’ থেকেই। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে ‘Suri’ কথাটি আসলে ‘Shuri’ আর যার অর্থ হল ‘কাস্তে আকৃতির অস্ত্র’। অর্থাৎ ‘Krang Suri' হলো ‘কাস্তে আকৃতির অস্ত্র রাখার গুহা’ , অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে ।
মেঘালয় ভ্রমণকারী আমরা সবাই Krang Suri Waterfall এ যায় অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে। কিন্তু এরপর যখন যাবেন,খুঁজবেন নাকি প্রাচীন সেই অস্ত্র রাখার গুহা ? খুঁজতে পারেন। তবে পেলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
ভিডিওতে মেঘালয় ভ্রমণ -
ভিডিওতে মেঘালয় ভ্রমণ -
0 Comments